২৬শে মার্চ ১৯৭৩। খুলনা বেতার থেকে প্রচার শুরু হল নিজস্ব অনুষ্ঠান। সময়ের হিসেবে সামান্য ৫৫ মিনিট! অথচ কী অসামান্য প্রেরণা! কী মার্জিত প্রকাশ! চারপাশের প্রশংসা, মূল্যায়ন আর নিজের দায়বদ্ধতা থেকে নিজস্ব অনুষ্ঠানের ছায়া দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘ হল। ৫৫ মিনিট ছাড়িয়ে নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচারের সময় দাঁড়ালো ৪ ঘন্টায়। তখনও খুলনা বেতারের শ্রোতা বাঁধা পড়ে ছিল ১০ মাইলের চৌহদ্দিতে। ১৯৭৫ এ আরো ১০ কিলোওয়াট শক্তির ট্রান্সমিটার সংযোজনের আয়োজন শুরু হল। ১৯শে এপ্রিল ১৯৭৬। ১০ মাইলের চৌকাঠ পেরিয়ে ৩৫ মাইলের শ্রোতার কানে পৌঁছালো খুলনা বেতার-আয়োজন। যে শব্দের যাত্রা শুরু হয়েছিল সত্তরের ডিসেম্বরে, সে এখন আরো পরিণত, শাণিত। যে শব্দের যাত্রা শুরু হয়েছিল গল্লামারির ছোট্ট ভবন থেকে সে ঠিকানা পেল শহরের প্রাণকেন্দ্রে। বাড়লো শক্তির প্রখরতা।
১লা জুলাই ১৯৭৯। সর্বাধুনিক ব্রডকাস্টিং হাউজ হিসেবে খুলনার বয়রায় গড়ে ওঠে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃক নির্মিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বেতার ভবন। স্টুডিও ৪টি। সেখানে সারাক্ষণ চলছে শব্দের ভাঁঁজে তথ্যের সন্ধি, স্বরের সঙ্গে সুরের কাব্যিক মাত্রা, মনের অচেনা গলিতে অযান্ত্রিক অনুভূতির উপস্থাপন। উৎকীর্ণ শ্রোতার সমান্তরাল যাত্রা। খুলনা বেতার থেকে উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যের প্রতিধ্বনি যেন পূর্ণতা পায় একেকটি দৃশ্যকল্পে। সেখানে চিত্রিত হয় নির্মোহ দৃষ্টির ইতিহাস। মাইক্রোফোনে প্রাণ পায় পরিবেশের বেপরোয়া আর্তনাদ, প্রকৃতির পূর্বাভাস। বন্দি হয় ধর্মের খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানবিক সমাজের সচকিত উচ্চারণ। শ্রুতিমধুর বাক্যগঠন চিনিয়ে দেয় বাণিজ্যের সওদাগর থেকে চিলেকোঠার সেপাই জীবন। উপলব্ধির বৈচিত্র্য পূর্ণতা পায় দৃষ্টিপাতে। রূপায়িত হয় স্বাস্থ্যের মানচিত্র। এসবই খুলনা বেতারের নিত্যদিনের পরিবেশনা। পরিকল্পিত কাঠামো, নিখুঁত বুননে বাঁধা পড়ে শ্রোতার ইচ্ছেপূরণের প্রার্থনা। আয়োজনের আবশ্যিক উপাদান হয়ে ওঠে খেলা, তারুণ্য, বিজ্ঞান, কৃষির তত্ত্বতালাশ। অগণিত শ্রোতার কাঙ্খিত তথ্যের খোঁজে পাড়ি জমাতে হয় বিশ্বগ্রামে, দরজার ওপাশে। বিমূর্ত হয়ে ওঠে নারীর অন্দরমহলের ক্যানভাস। রচিত হয় শিশুদের আগামির মঞ্চকথা।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS